কাফি এবার সাভার ইয়ামিন হত্যা মামলায়
“পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ,পৃথিবীর সব থেকে দুর্বহ ভার” এটা আমাদের সকলেরই জানা।
কিন্তু সেই সন্তানের লাশ এর যখন, হয়না শেষ গোসল।মেলেনা কাফন।দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় দিতে দাফন।
তখন সেটাকে আপনি কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করবেন???
হ্যাঁ এমনটাই ঘটেছিল ২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলনে হওয়া,সাভারে প্রথম শহীদ, শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন হত্যা মামলা ও তার পরিবারের ভাগ্যে।
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ মহউদ্দিন এর প্রথম ও একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলো ইয়ামিন।
ছোটকাল থেকেই মেধাবি ইয়ামিন, সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পাশ করার পরে ভর্তি হন মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি(MIST) এর, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও, সেখানে চলমান ছাত্র রাজনীতির অপচর্চার কারনে,ভর্তি হয় নি ইয়ামিন।
সেই সময়, যেই ছাত্র অপরাজনীতির বলি হয়েছিলো তারই জন্মস্থান কুষ্টিয়ার আর এক মেধাবী বুয়েট এর ছাত্র আবরার ফারহাদ।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তাই না??
যে রাজনৈতিক নির্মমতা এরাতে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে দিয়েছিলো ছেড়ে।
সেই রাজনৈতিক বর্বরতায় আজ তার, জীবন নিলো কেড়ে।
কি হয়েছিলো সেদিন ইয়ামিনের সাথে???কেনোই বা তার এই করুন পরিণতি???
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে,১৮ জুলায় উত্তাল ছিল সাভার– আরিচা মহাসড়ক।
ছাত্র জনতার এই যৌক্তিক আন্দোলনকে পণ্ড করতে, স্বৈরাচার সরকারের কুক্ষিগত পুলিশ বাহিনি,যুদ্ধে ব্যবহৃত নেভি ব্লু রঙের সাঁজোয়া যান(এপিসি) নিয়ে হাজির হয়,এবং আন্দোলনকারীদের উপর রাবার বুলেট, ছররা গুলি,টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
যেভাবে এপিসি থেকে ফেলা হয় ইয়ামিনকে
সাভারের বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ওভার ব্রিজের উপরে সাঁজোয়া যানটি অবস্থানকালে, সড়কের মধ্যকার উঁচু বিভাজক গুলো টপকে, ইয়ামিন হত্যা মামলায় এক পর্যায়ে সাঁজোয়া যানটির উপরে উঠে যান।
উপরে ওঠার সাথে সাথেই এপিসি থেকে ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে,তার বুকের বাম পাশ ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় এবং এপিসির ছাদেই লুটিয়ে পড়ে সে।
এখানেই নির্মমতা শেষ হলেও পারতো।কিন্তু না নিষ্ঠুর নির্মমতার সাক্ষী হওয়া এখনো আমাদের বাকি।
ইয়ামিন হত্যা মামলায় নিথর দেহটাকে নিয়ে কিছুক্ষণ চলার পরে। সাভারে রানা প্লাজা ও ভ্যাট এলাকার মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে, দুই জন পুলিশ এপিসি গাড়ির ঢাকনা খুলে উপরে উঠে ইয়ামিনের নিথর দেহটাকে টেনে সড়কে ফেলে দেন।
কি ভাবছেন এই বুঝি নির্মমতার শেষ চিত্র??না..
সড়কে পরা ইয়ামিনের দুই হাত দুইদিকে ছড়ানো,এবং পা দুটি ভাজ হয়ে পড়ে। এক পা এপিসির চাকার সাথে আটকে যায়।তখনো ইয়ামিন জীবিত ছিলো,তাকে শ্বাস নিতে দেখা যায়।
এখানেই ক্ষান্ত হয়নি মানুষরূপি নরপিশাচরা।দুইজন পুলিশ এফিসি থেকে নেমে,ইয়ামিন হত্যা মামলায় টানতে টানতে সড়ক বিভাজকের কাছে নেই,তারপর বিভাজকের উপর দিয়ে সার্ভিস লেনে ফেলে দেয়।তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা কোন আবর্জনার বস্তা, টেনে রাস্তার বাইরের ফেলে দিচ্ছে।
১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর।বাংলাদেশে এরকম অমানবিক নৃশংসতার সাক্ষী কখনো হয়নি।
এর প্রায় ১ ঘন্টা পরে, স্থানীয় লোকজন ইয়ামিনকে নিকটস্থ সাভারে না মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ডাক্তারের ভাষ্যমতে :
“ইয়ামিনকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই,অসংখ্য রবার বুলেটে ঝাঁঝড়া হয়ে,অধিক রক্ত ক্ষরণে তার মৃত্যু হয়”
ইয়ামিনের এই নির্মম মৃত্যুর ভিডিও,দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে,ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
মৃত্যুর পরেও, ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০বর্গ কিলোমিটার এর এই বাংলাদেশে, ইয়ামিনের জন্য মাত্র, সাড়ে তিন হাত জায়গার খোঁজে,ইয়ামিনের বাবাকে ঘুড়তে হয় দ্বার থেকে দ্বারে।
ছেলেকে, জন্মস্থান কুষ্টিয়াতে দাফন করতে চাইলে,স্থানীয় থানার অনুমতি ব্যতীত লাশ দাফন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
সাভারে লাশ দাফনের ক্ষেত্রে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছারা লাশ দাফন অসম্ভব বলে জানানো হয়।
শেষমেষ সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকার স্থানীয় কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয় ইয়ামিন।
পুত্র শোকে কাতর ইয়ামিনের বাবা বলেন :-
“একজন জীবন্ত মানুষকে এভাবে কোন মানুষ নিচে ফেলে দিতে পারে না। আমি কারো কাছে বিচার চাই না। জিডি করিনি।ছেলের লাশের পোস্টমর্টেম করাইনি।শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছে। সবাই দোয়া করবেন, আমরা যেন ধৈর্য ধরতে পারি।”
ইয়ামিন ১৮ই জুলাই মৃত্যুর ১২ ঘন্টা আগেও ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলো :
“শুধু কোটা নয়, গোটা দেশটাই সংস্কার প্রয়োজন”
ইয়ামিনদের তাজা রক্তের বিনিময়ে কোটার সংস্কার তো হয়েছে। কিন্তু দেশের সংস্কার????
- শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
- এমআইএসটি
- আব্দুল্লাহিল কাফী