ইরানের মিসাইল হামলা সম্প্রতি ইসরাইলের শক্তিশালী আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ইরানের ২০০ টি এর ও বেশি ইরানের মিসাইল হামলা কে কেন্দ্র করে আবার ও বিশ্ব রাজনীতির আলোচনায় উঠে এসেছে ইরান ইসরাইলের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কথা।
ইরানের মিসাইল হামলা
কিন্তু ইরান এবং ইসরাইলের দ্বন্দ্বের আসল ইতিহাস কি???
বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্বের প্রভাবই বা কি??
সেটাই জানব আমাদের আজকের এই আলোচনায়।
ইরান ও ইসরাইলের শুরুর ইতিহাস : ১৯৪৮ সালে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ পূর্ব তীরে ও লোহিত সাগরের উত্তর তীরে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করে ইসরাইল।
ইসরায়েলে ইরানের হামলা
ইরান ইসরায়েলের সম্পর্কের শুরুটা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ।
তুরস্কের পর ইরানই ছিল দ্বিতীয় মুসলিম দেশ যারা ইসরাইলের স্বাধীনতার পক্ষে, এবং ইসরাইলকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যেটা সে সময় মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি মকরে। সে সময় পাশ্চাত্য দেশগুলোর সাথেও সাথে আমেরিকার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতো ইরান।
১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব ও ইরান ইসরায়েল সম্পর্কে ফাটল : আয়াতোল্লাহ খোমিনির নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে, পাশ্চাত্যপন্থী
থেকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় ইরান।
ইরানের এই ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের সাথে ইসলাইয়ের সম্পর্কের অধঃপতন ঘটতে শুরু করে।
ইসলামী বিপ্লবের ফলে গঠিত ইরানের নতুন সরকার,ইসরায়েলের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে এবং ইসরাইলকে অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।
ইসরাইল কবে ইরানে হামলা করে
হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ : ইসরাইলের সীমান্তবর্তী দেশ লেবানন। যারা সৃষ্টির পর থেকেই ইসরায়েল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে ।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি
লেবাননের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, অরাষ্ট্রীয় সামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে শুরু থেকেই অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে ইরান।
ইসরাইলকে মূলত চাপে রাখার জন্যই, ইরানের হাত ধরেই হিজবুল্লার জন্ম, বেড়ে ওঠা ও পরিচালনা বলে সকলের ধারণা।
হিজবুল্লাহ কে সমর্থন, অস্ত্র যোগানোর জন্য ইয়া না ইসরাইলের মধ্যে বৈরী সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি : ইরান পারমাণবিক দিক থেকে খুব সক্রিয় ছিল, যেটি ইসরায়েলের জন্য ছিলো হুমকি স্বরূপ।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের বহু নাম করা পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের গুপ্ত হত্যা করে,যাতে ইরান পারমাণবিক গবেষণার দিক থেকে বেশি না আগাতে পারে।
২০১০ সালে ইসরাইল ইরানের পারমানবিক প্রোগামে সাইবার আক্রমণ চালায়,এই নিয়ে এই দুই দেশের সম্পর্কের আরো অবনতি হয়।
ইসরায়েল ইরানের হামলা
হামাস : ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখল,ও ফিলস্তিনিদের উপর ইসরায়েল রাষ্ট্র জন্মের পর থেকেই নানা ভাবে শোষন ও অমানবিক অত্যাচার করে আসছে।
ইসরায়েলের এই নিপিড়ন থেকে ফিলিস্তিন এর সাধারণ জনগণ কে বাঁচাতে জন্ম হয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংঘটনে হামাস।
লেবানননের হিজবুল্লাহ এর মত,হামাস ও ইরান মদদপুষ্ট। তাদেরকে ও অর্থ,সামরিক প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র গোলা বারুদ দিয়ে সাহায্য করে আসছে ইরান।
যার ফলে হামাস কে নিয়ে ও ইরান- ইসরায়েল এর মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।
ইসরায়েলের উপর ইরানের হামলা
হুতি : লোহিত সাগরের মূর্তিমান আতঙ্ক ইয়েমেনের। হুতি রা,হামাস,হিজবুল্লাহ ওর মত হুতিরাও ইরান সমর্থিত সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন ইয়ামেনের পশ্চিমা সমর্থক শাসকগোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে।
গত বছর ও লোহিত সাগর দিয়ে চলাচকারী ইসরাইল ও আমেরিকার একাধিক জাহাজে তারা হামলা চালায়।
আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার : ইসরাইল ও ইরানের মধ্যকার সকল দ্বন্দ্বের মূল কারণ হলো, মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার।
এই দুই দেশই চায়, মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে নিজেদেরকে একক অধিপতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে,এবং নিজেদের মিত্র শক্তি বাড়াতে।
ইরান যার জন্য ফিলিস্তিনিতে হামাস, লেবাননে হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুতি, এবং সিরিয়া তে কিছু সরকারবিরোধী সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীকে পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: ইসরাইল ও ইরানের দ্বন্দ্বের শুরু এবং এখন অব্দি চলার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলোতে,কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সর্বদা তৎপর।
ইরাক, সিরিয়ার করুণ পরিণিতের পেছনে একমাত্র দায়ী যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।ইসরাইলের যে কোন কর্মকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন দিয়ে আসে তারা।
ইরানের হামলা শুরু
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমান সময়ে, ইরানের ইসরাইলে হামলা নতুন করে ভাবাচ্ছে পুরো বিশ্বকে।
ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার চলমান সংকটের অতি দ্রুত সমাধান না হলে পুরো বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে,আবারো পৃথিবীর অস্তিত্ব বিলিনের খেলায় মেতে উঠতে পারে।