গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে, টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচি বন্যার্তদের সহযোগিতায় , সবকিছুর কেন্দ্র বিন্দুতেই যেন থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও টি এস সি।
মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে, নতুন এক বাংলাদেশের জন্ম হতে না হতেই, দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু হওয়া বন্যায়, ১১ টি জেলার প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বন্যা কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে, ২২ আগস্ট থেকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি,ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া ও কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হয় গণত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম।
টিএসসিতে ত্রান সংগ্রহ
একদিন না পেরোতেই গণ ত্রাণ কার্যক্রম রূপ নয় গণজোয়ারে।বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া গণ ত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের স্বাভাবিক আনাগোনা দেখা গেলেও।পরের দিন শুক্রবার নানা বয়স, নানা পেশা ও শ্রেণীর মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে টিএসসি প্রাঙ্গণ।
টিএসসি তে দেখা যায় লম্বা গাড়ির লাইন। কেউ রিকশায়, কেউ ভ্যানে, কেউ সাইকেলে, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে আর্থিক সহায়তা ও ত্রান সামগ্রী নিয়ে হাজির হন টি এস সি চত্বরে।
বিভিন্ন বয়স, শ্রেনি ও পেশার মানুষদের, বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার, জামাকাপড়, ওষুধ
ও প্রয়োজনীয় নানাবিধ সামগ্রী নিয়ে হাজির হতে দেখা যায় টিএসসি প্রাঙ্গনে।
হাজারো শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় সকাল ১০টা হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলে এই গণ ত্রান কার্যক্রম।
টিএসসি যেন পরিনত হয় গণমানুষের মানবতার মিলনমেলায়। যেখানে ধনী থেকে দরিদ্র,চাকরিজীবী থেকে দিনমজুর, সুস্থ থেকে পঙ্গু, হিন্দু থেকে মুসলিম সব ধরনের মানুষকে একই কাতারে দাঁড়িয়ে মানবতার হাত বাড়াতে দেখা যায়।
টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচি
এই গণ ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে কিছু দৃশ্য সবার মনে আচর কেটে যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুককে লাইনে দাঁড়িয়ে, পথে পথে ঘুরে তার সারাদিনের উপার্জিত ভিক্ষার অর্থ, ত্রান তাহবিলে দিতে দেখা যায়। আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনে উমরাহ করার উদ্দেশ্যে, দীর্ঘদিন যাবত জমানো টাকা ত্রান তাহবিলে দিতে দেখা যায় এক ব্যাক্তি কে। প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া তিন বছর বয়সী এক বালককে, দীর্ঘদিন ধরে তার টাকা জমানার মাটির ব্যাংক নিয়ে দেখা যায় টিএসসিতে।এমন হাজারো মানবতার দৃষ্টান্ত উঠে আসে এই গণ ত্রান কার্যক্রম থেকে।
নগদ সংগ্রহ ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রথম দিনে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা, ও দ্বিতীয় দিনে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা সংগ্রহ হয় এই গণ ত্রাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রির বিশাল স্তূপ লক্ষ্য করা যায় টিএসসির বারান্দায়।
ত্রাণ সংগ্রহের পাশাপাশি, ত্রাণ সামগ্রী বোঝাই ট্রাক নিয়ে, বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রান বিতরণ কার্যক্রম ও শুরু করেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এছাড়া বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে, হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুর্গম বন্যা কবলিত এলাকাতে এই ত্রান পাঠানো হয়।
এ পর্যন্ত ১৯১ ট্রাক ত্রান সামগ্রী বন্যা দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা টিএসসিতে ত্রান সংগ্রহ
২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই গণ ত্রান কার্যক্রম এর সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ৪ সেপ্টেম্বর।১৪ দিনের এই গণ ত্রান কার্যক্রমে সর্বমোট ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ নগদ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। এর মধ্যে ত্রান বিতরণ অন্যান্য কার্যক্রমে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা।
বাকি টাকা সরকারের সাথে সমন্বয় করে, বন্যা পরবর্তী পূর্ণবাসন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চিত্র।
বাংলাদেশের মানুষ অসংখ্য বার বন্যার সাক্ষী হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলায়, গণমানুষের সহায়তার এই গণ জোয়ার, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। মানবতার এই ধারা, অব্যাহত থাক আজীবন, এটাই আমাদের সকলের কামনা।
ঢাবি টিএসসিতে
টিএসসিতে ত্রান
টিএসসিতে ত্রাণ সংগ্রহ
টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচি |