তোফাজ্জল হত্যা, কিভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তোফাজ্জলকে?

তোফাজ্জল হত্যা হচ্ছে “History Repeats Itself” অর্থাৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।স্বতঃসিদ্ধ এই কথারই যেন প্রমাণ দিচ্ছে তোফাজ্জেল এর হত্যা।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জেল এর সাথে ঘটে যাওয়া অমানবিক,পাশবিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা।

 তোফাজ্জল হত্যা

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত, বুয়েটের একটি হলে ছাত্র নামের কিছু মানুষরূপী জানোয়ার এর, শিবির সন্দেহে রাত ভর করা নির্যাতনের মৃত্যু হয়, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ এর।

ঠিক পাঁচ বছর পর,গত ১৮ই সেপ্টেম্বর সেই ভয়ংকর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির যেন সাক্ষী হলো পুরো বাংলাদেশ।তবে এবারের ইতিহাস আরো নৃশংস আরো নির্মম।

তোফাজ্জল নামক যুবুক কে গন পিটুনি

স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থেকেই,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন হল গুলোতে চলছে,নানা উৎসব ও আয়োজন।কেননা ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের এই সাফল্যের সব থেকে বড় দাবীদার তারাই।

এরই ধারাবাহিকতায়, ফজলুল হক মুসলিম হলে সকালবেলা চলছিল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।হঠাৎ খেলায় অংশগ্রহণকারী কিছু ছাত্রদের মাঠের এক পাশে ব্যাগে রাখা ছয়টি মোবাইল ফোন ও চারটি মানিব্যাগ চুরি হয়।

ঐদিন রাতেই টুর্নামেন্ট চলাকালে, খেলার মাঠ থেকে রাত ৮ টা নাগাদ চোর সন্দেহে তোফাজ্জেল নামের একজন বহিরাগতকে আটক করে ছাত্ররা।

পরবর্তীতে তাকে গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সেখানে রাত দশটা পর্যন্ত মারধর করার পরে,তাকে হলের ক্যান্টিনে খাবার খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়।
খাওয়া শেষে তাকে আবার গেস্ট রুমে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্ররা,চলে রাত ১২ টা পর্যন্ত।

মারধরের একপর্যায়ে তোফাজ্জলের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে,তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যেখানে করতে বলেছে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

গেস্ট রুমে তোফাজ্জল কে নির্যাতনের নির্মম ভিডিও, ও ক্যান্টিনে মার শেষে খাওয়ার ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে,মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

আব্দুর রহমানের ছেলে তোফাজ্জল

পরবর্তীতে তার পরিচিত কয়েকজনের পোস্ট থেকে জানা যায় তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনা পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নে।
সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন, ২০১১ সালের রোড এক্সিডেন্টে তার বাবা মারা যায়।

বাবার মৃত্যুর আড়াই বছর পরে মারা যায় তার মা। এরই মাঝে প্রিয়জনের সাথে তার বিচ্ছেদ ও ২০২৩ সালে পুলিশের এস আই একমাত্র বড় ভাইয়ের লিভার ক্যানসারে মৃত্যুতে, সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

গত দুই বছর যাবত তাকে ঢাকা ভার্সিটির আশেপাশে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

তোফাজ্জল হত্যা তোফাজ্জলের মৃত্যু

তোফাজ্জলের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উঠে আসা, তার পিঠ হাত ও পায়ে,জমাট বাধা রক্ত, ফোলা ও নীল জখমের চিহ্ন প্রমান করে, মৃত্যুর আগে কি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে সে।

শুধু নির্যাতনেই ক্ষান্ত হয়নি ছাত্র নামের হায়েনারা,তোফাজ্জলের পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে, টাকারও দাবি করেন তারা।টাকা না দিলে তোফাজ্জলকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।

মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল কে শুধুমাত্র সন্দেহবসে এভাবে নির্দয়ভাবে হত্যার বিচারে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হচ্ছে মশাল মিছিল।

সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষা ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে একজন লিখেছেন :
“শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে মানুষ হওয়াটা বেশি প্রয়োজন।
আমরা মানুষ হওয়ার আগে শিক্ষিত হতে চাই “

যে ছাত্রদের হাত ধরেই হয়েছে নতুন বাংলাদেশের সূর্যোদয়।তারাই আজ কেনো এতটা বন্য, এতটা নির্দয়? এটা শুধু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, না অবাধ স্বাধীনতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার???

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *