পার্বত্য অঞ্চলের ঘটে যাওয়া সহিংসতা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া সহিংসতা কে কেন্দ্র করে,উত্তাল  হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। 

পার্বত্য অঞ্চলের

পার্বত্য অঞ্চলের চট্টগ্রাম যুদ্ধ

পার্বত্য অঞ্চলের, রাজনৈতিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠনগুলো হয়ে উঠেছে সক্রিয়।

একই সাথে এই সংগঠনগুলোর,দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একক স্বাধীন রাষ্ট্র জ্যুমল্যাণ্ড প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ও আলোচনায় উঠে এসেছে সবার সামনে। 

কিন্তু কি এই জ্যুমল্যাণ্ড??এর পেছনের ইতিহাস বা উদ্দেশ্যই কি?

 

জানতে হলে আমাদের, পার্বত্য অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বা সংগঠনগুলোর সৃষ্টির ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। 

বম উপজাতি

পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতিদের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা এর নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে গঠিত হয়, পার্বত্য অঞ্চলের  প্রথম সুসংগঠিত, রাজনৈতিক বামপন্থী দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা সংক্ষেপে জে.এস.এস।

নিজেদের স্বার্থ অধিকার আদায়ের জন্য,১৯৭৫ সালে আত্মপ্রকাশ করে, জে.এস.এস এর  সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন শান্তি বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা যিনি  সন্তু লারমা হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়।

 

শান্তিবাহিনী  প্রতিষ্ঠার পর থেকেই,পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি, ও তা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের ফলে, শুরু হয় শান্তি বাহিনী ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার সশস্ত্র আক্রমণ। 

এই দ্বন্দ্বের নিরসনে, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর,বাংলাদেশ সরকার ও শান্তি বাহিনীর মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী কার্যক্রম

ইউপিডিএফ জেএসএস

শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে,জেএসএস এর একদল তরুণ সদস্যবৃন্দ ১৯৯৮ সালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা সংক্ষেপে ইউপিডিএফ নামে নতুন একটি দল সংগঠন করে।

 

অনেকেই মনে করেন, ইউপিডিএফ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৈরি।সন্তু লারমা এর শান্তি বাহিনীর কর্তৃত্ব ও শক্তি খর্ব করার জন্যই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি প্রয়োগ করেন।

বাংলাদেশ সরকারের সাথে জেএসএস করা ১৫ পৃষ্ঠার  শান্তি চুক্তিতে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো ছিলো:

  • পার্বত্য অঞ্চলে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা  প্রতিষ্ঠা করা। 
  • পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন। 
  • পাহাড়িদের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও ভূমি আইন  সংস্করণ। 
  • সেনাবাহিনির স্থায়ী সেনানিবাস ব্যতীত  অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্প সমূহ প্রত্যাহার। 
  • ও পাহাড়ি  অঞ্চলে অ-পাহাড়ি লোকদের বসবাস নিয়ন্ত্রণ,ও সীমাবদ্ধকরণ। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও শান্তি বাহিনীর মধ্যকার এই চুক্তিপত্রে,নানা বিষয় উল্লেখ থাকলেও, কোনোটিই পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের মুখ দেখে নি।

এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে,বিদ্যমান দল ও বিচ্ছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠী এর মধ্যকার,নীতিগত মতগত পার্থক্যের কারণে সৃষ্ট কোন্দলে, দলগুলো ভেঙে আরও অসংখ্য দলের সৃষ্টি হয়। 

যেমন ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ এর সদস্যদের মধ্যকার ঝামেলা কে কেন্দ্র করে,তুই হয় নতুন দল ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক। 

 

পার্বত্য অঞ্চলের এই বিভিন্ন দল ও সংগঠনগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো, পার্বত্য অঞ্চলের অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও উপজাতিদের,অধিকারও স্বার্থ নিশ্চিতকরণের জন্য, বাংলাদেশ থেকে পৃথক, স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত একটি রাষ্ট্রের গঠন। 

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কারা

যেটি সকলের কাছে পরিচিত হবে জুমল্যান্ড নামে।

পাহাড়ি উপজাতীয়রা,পাহাড় পরিষ্কার করে, পাহাড়ের গায়ে গর্ত করে, বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করে, যেটিকে বলা হয় জুম চাষ । এবং পাহাড়ি জনগণ জুম সম্প্রদায় হিসেবেও পরিচিত।

 এখান থেকেই মূলত জুমল্যান্ড নামের উৎপত্তি। 

পার্বত্য অঞ্চলে তিন জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবান এর পাহাড়ি জুম সম্প্রদায়ের স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত  দেশ হবে এই জুমল্যান্ড।

 

ইতিমধ্যে প্রস্তাবিতে জুম ল্যান্ডের, জাতীয় সংগীত পতাকা ও প্রতীক আত্মপ্রকাশ করেছে। 

 

জুমল্যাণ্ড নামের স্বাধীন রাষ্ট্রে গঠন, সফলতার মুখ দেখবে কিনা সে ব্যাপারে আমরা কেউই নিশ্চিত নয়। 

তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠনগুলো,পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী  দেশগুলোর মদদপুষ্ট হয়ে, নতুন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা যে অব্যাহত রাখবে এ ব্যাপারে আমরা সবাই নিশ্চিত।

কারণ প্রতিটি দেশই চায়, ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি প্রয়োগ করে,পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর একটি অংশকে আলাদা করে নিজেদের মতো করে শাসন করতে।বাংলাদেশের জনগণ ও সেনাবাহিনী কে এ ব্যাপারে সর্বদা প্রস্তুত, সতর্ক  ও সজাগ থাকতে হবে। 

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কারা
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কতটি

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাংলাপিডিয়া

শান্তি চুক্তি কত সালে হয়?
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল কয়টি
পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *