বুরকিনা ফাসোতে ৬ ০ ০ মানুষকে কয়েক ঘন্টার ভিতরে গুলি করে মেরে ফেললো বুরকিনা ফাসোতে এর একটি জঙ্গি বাহিনী।
বুরকিনা ফাসোতে জঙ্গি বাহিনী
গত ২৪ আগস্ট, জামাত নুসরাত আল ইসলাম ওয়াল- মুসলিম(জেএনআইএম) নামের সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী বারসালোঘোতে নামক একটি গ্রামে, অতর্কিত হামলা করে,নারী শিশু সহ ৬০০ জনের মত নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে।
পশ্চিমা আফ্রিকার একটি হতদরিদ্র দেশ বুরকিনা ফাসো।দীর্ঘ শাসন ও শোষণ বঞ্চনার পর, ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এই দেশটি।
স্বাধীনতা ৬৪ বছর পার হলেও,জাতিগত দাঙ্গা ও দারিদ্রতার জাতা কলে আজো পৃষ্ঠ হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি।
বুরকিনা ফাসো সামরিক অভ্যুত্থান
স্বাধীনতার এত বছর পার হওয়ার পরও দেশটির নাজুক অবস্থার কারণ এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নরকে হত্যাকান্ডের আসল কারণ খুঁজে বের করবো আমাদের আজকের এই আলোচনায়।
ভৌগোলিক অবস্থান : দেশের উত্তর পশ্চিম দিকে মালি, পূর্বে নাইজার এবং দক্ষিণে বেনিন প্রজাতন্ত্র ঘানা ও টোগো অবস্থিত।
পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের সামরিক অভ্যুত্থান : সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার অনেক দেশের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে, যার মধ্যে বুরকিনা ফাসোর সীমান্তবর্তী দেশ ঘানা ও নাইজার উল্লেখযোগ্য।যেটির প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে বোরকিনা ফাসোতে ও।
বুর্কিনা ফাসো এর সামরিক অভ্যুত্থান : ২০২২ সালে জানুয়ারিতে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বুর্কিনা ফাসোর ক্ষমতায় আসেন, পল হেনরি দামিবা।
মাত্র ৮ মাসের মাথায় তিনি ক্ষমতচ্যুত হন,সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে।
ফল হেনরি দামিবা,দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সশস্ত্র জনগোষ্ঠী দমনে ব্যর্থ দাবি করে,ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে এই অভ্যুত্থান ঘটান।
২০২৩ সালেও আরেকটি সেন অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালাবে,ক্যাপ্টেন ইব্রাহিমের সরকার তা কঠিন হস্তে দমন করে।
ফ্রান্সের আধিপত্য : পশ্চিম আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশগুলোতে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল।
ফ্রান্স মূলত এই সকল দেশ থেকে স্বর্ণ তেল কফি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ সংগ্রহ করে নিজের দেশে নিয়ে যেত। এবং অর্থনৈতিকভাবে নিজেরা আরো স্বাবলম্বী হত।
ফ্রান্সের এই অর্থনীতি বা রাজনৈতিক শাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর সাধারণ জনগণ বিরোধিতা প্রকাশ করে,এবং দীর্ঘ সময় চলাকালীন গৃহযুদ্ধের পরে, এই দেশগুলো ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পায়।
ঔপনিবেশিক শাসনের পটভূমি
কাগজে কলমে ঔপনিবেশিক শাসন এর সমাপ্তি হলেও। ফ্রান্স এই দেশগুলোতে রাজনৈতিক ও সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে,ঠিক যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, আমেরিকা তার কর্তৃত্ব বজায় রেখে চলেছে।
ফ্রান্স পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে, এই দেশের জনগণকে নিরাপত্তা প্রদান অর্থনৈতিকভাবে সাহায্যের নামে বিভিন্ন সামরিক ঘাটি স্থাপন করেছে।
বুর্কিনা ফাসো এর বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন
জামাত নুসরাত আল ইসলামের নতুন খবর
জামাত নুসরাত আল ইসলাম ওয়াল- মুসলিম(জেএনআইএম) : 2017 সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি বুর্কিনা ফাসো,মালি ও নাইজারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই সংঘঠনটি মূলত স্থানীয় সরকার ও পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে।
বোকো হারাম : এটি নাইজেরিয়া ভিত্তিক সংগঠন হলে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ও এদের বিভিন্ন অঙ্গ শাখা তৎপর। মূলত পশ্চিমা আফ্রিকার দেশগুলোতে ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা এদের মূল লক্ষ্য বলে এরা দাবি করে আসছে।
আনসারুল ইসলাম : এটা ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি স্থানীয় সরকার গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে, অধিকার বঞ্চিত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
আল কায়েদা : এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা আলজেরিয়া তে হলেও। পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ২০১০ থেকে সক্রিয়।
এরকম আরো অসংখ্য জঙ্গি সংগঠন বুর্কিনা ফাসোতে বিদ্যমান।
রাজনৈতিক অস্থিরতা,অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, ও নিজেদের মধ্যকার জাতিগত বিরোধের জের ধরেই
বুর্কিনা ফাসো তে অসংখ্য জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে।
যারা নিজেদের অধিকার আদায়ে,ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায়,সরকারপক্ষ এবং নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মাধ্যমে বুর্কিনা ফাসোতে সর্বদা একটি অস্থিতিশিল পরিবেশ তৈরি করে রাখছে। যারই মাসুল দিতে হলো বারসালোঘোত গ্রামের নারী, শিশু সহ সাধারণ জনগণকে।