মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করার ফলে কি ঘটেছিলো ভারতে ?
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত।যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস।
এদেশে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও,জনসংখ্যা হিসেবে ভারতে অবস্থানরত মুসলমানের সংখ্যা,পৃথিবীর অনেক মুসলিম প্রধান দেশ থেকেও বেশি।
পুরো বিশ্বে, মুসলিম জনসংখ্যা হিসেবে,ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পরেই ভারতের অবস্থান।
ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫.৬% মুসলিম।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৭ বছর পার হলেও হিন্দু ও মুসলমানের সম্প্রীতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
বরং ইতিহাস সাক্ষী হয়েছে বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে 1992 সালের বোম্বাই দাঙ্গা, ২০০২ সালের গুজরাট সহিংসতা, ২০২০ সালের দিল্লী দাঙ্গার মত হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যকার অসংখ্য নৃশংস ঘটনার।
সম্প্রতি হাজারো মুসলমানদের, মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে লং মার্চ কে কেন্দ্র করে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে,ভারতের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যকার চলমান দীর্ঘদিনের বৈরি সম্পর্কের ইতিহাস।
কিন্তু কেন হঠাৎ হাজার হাজার মুসলমানদের এই মুম্বাই মুখী পদা যাত্রা??
ভারতে নবীকে অবমাননা
মুসলমানদের ধর্মীয় অস্তিত্বে আঘাত, ও অবমাননার জন্যই এই পদযাত্রা।
সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি এর পক্ষপাতপুষ্ট ধর্ম গুরু রামগিরি মহারাজ,
মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করায় এবং বিজেপির বিধায়ক নিতেশ নারায়ণ রানে এর মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আক্রমনাত্মক বক্তব্য কে,
কেন্দ্র করে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
বিধায়ক নিতেশ নারায়ণ রাণে তার এক বক্তব্যে,মহানবী সাঃ কে নিয়ে করা রামগিরি মহারাজের কটুক্তি কে সমর্থন করে,ভারতে বসবাসরত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে হুমকিরত বক্তব্য প্রদান করেন,তিনি বলেন :
“যদি কেউ রামগিরির বিরুদ্ধে কিছু বলে তাহলে মসজিদে গিয়ে বেছে বেছে তাদের মারা হবে”
ধর্মীয় অবমাননা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে,রাজপথে নামে ১২ হাজারেরও বেশি ভারতীয় মুসলিম জনগণ।
সম্ভাজি ছত্রপতি এলাকা থেকে কয়েকশত গাড়ি একত্র হয়ে, মুম্বাই শহরে প্রবেশের জন্য যাত্রা শুরু করে। মুম্বাই মুখে অভিযাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন সহ আরো বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
এই লংমার্চ কর্মসূচির অন্যতম মুসলিম নেতা ও ভারতের সাবেক এমপি ইমতিয়াজ জলিল বলেন:
“আমরা জানি না আমরা কোথায় যাব, তবে আমরা যে করেই হোক মুম্বাই পৌঁছাবো। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে বিচার চেয়ে বিচার পাইনি। তাই এখন,সরাসরি রাষ্ট্রের কাছে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কানের কারণ জানতে চাই”
মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি পুলিশ
উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ধর্মগুরু রামগিরি মহারাজ এর বিরুদ্ধে, এর পূর্বেও মুসলমানদের ধর্মীয় স্বার্থে আঘাত
মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য, ছাত্র বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে,কিন্তু কোনটিরই সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার এখনো হয়নি।
সেজন্যই মূলত রামগির মহারাজ ও নীতিশ রানের উস্কানী মূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে, ও গ্রেফতারের দাবিতে হাজার হাজার মুসলমানের, মুম্বাই মুখি এই পদযাত্রা।
যদিও রাজ্য সরকার,উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিণাম আন্দাজ করতে পেরে, এটি নিয়ন্ত্রণে, মুলণ্ড এলাকায় ৩০০০ এর বেশি অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করেন এবং এ পরিস্থিতির সামাল দেন।
মুম্বাই শহরে পৌঁছাতে না পারলেও,লং মার্চের নেতৃত্বদানকারী নেতারা, কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন এবং রামগিরি মহারাজ ও নীতিশ রানের বিচারের দাবিতে, তাদের সকল দাবি দাওয়া তুলে ধরেন
এদিকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে কটুক্তি করায়,বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের বিভিন্ন সংগঠন, ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ সংঘটিত হয়।
ইসলাম অবমাননা ও হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে কটুক্তি করায়,মুসলিম হিসেবে আমাদের করণীয় কি??
এবং ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক, হযরত মুহাম্মদ সাঃ নবীজীকে কে কটুক্তি করার ব্যক্তির শাস্তির বিধান কি???
এই প্রশ্নের জবাবে, বাংলাদেশের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন :
“মুসলমানদের একটি জায়গা আছে, সেটি হল হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ইজ্জত ও সম্মান।
যেখানে একজন মুসলমান কোনভাবেই ছাড় দিতে পারে না।
এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে অসম্মান বা অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড”
হযরত মুহাম্মদ সাঃ শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট দেশ বা জাতির নয়,পুরো বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর, আবেগ আদর্শ ও আলোর দিশারি,
তাই তাকে নিয়ে, কোন কটুক্তি বা অবমাননা যে কোনো দেশের মসুলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়।
যার ফলশ্রুতিতে ও প্রতিবাদে ভারত ও বাংলাদেশের মুসলমানদের এই লংমার্চ, বিক্ষোভ ও সমাবেশ।