পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যকার সংঘর্ষে উত্তাল দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্যাঞ্চলের ২ জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের ইতিহাস দীর্ঘদিনের।
সংখ্যালঘু পাহাড়ি আদিবাসীরা, নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার সর্বদায়।
অন্যদিকে কিছু বাঙালিরা, পাহাড়ি আদিবাসীদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন ও নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিপন্ন করতে সর্বদা ব্যস্ত।
এরই ফলশ্রুতিতে পার্বত্য অঞ্চলে জন্ম হয়েছে জাতিভিত্তিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের।
জন্ম হয়েছে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের, যারা নিজেদের শক্তির জানান দিতে পার্বত্য অঞ্চলকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল করে তোলে।
সম্প্রতি ১৮ই সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি দিঘিনালায় মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে, বেধড়ক পেটানো হয়। পরবর্তীতে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের আচরণিক বৈশিষ্ট্য
এই ঘটনার প্রতিবাদে বাঙালি শিক্ষার্থীরা দীঘিনালা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল নিয়ে লারমা স্কয়ার এর দিক অগ্রসর হয়।
লারমা স্কয়ার এর কাছে পৌঁছালে পাহাড়িরা তাদের বাধা প্রদান করে ও মিছিলে ঢিল নিক্ষেপ করে।
এক পর্যায়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।এতে দুই পক্ষের অনেকেই হতাহত হন। লারমা স্কয়ারে অবস্থিত দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পাহাড়ি ও বাঙালিদের উপর আক্রমণ ও লারমা স্কয়ার এ বিভিন্ন দোকানপাটে অগ্নি সংযোগের প্রতিবাদে পাহাড়িদের পক্ষ থেকে পরের দিন মিছিল বের করা হয়, ফলে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে মিছিল কে কেন্দ্র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঐ দিন রাতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর, পার্বত্য চট্টগ্রামের বামপন্থী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ(ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রণ্ট) গুলি করে,সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি করলে,ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়, উল্লেখযোগ্য যে নিহিত তিনজনই পাহাড়ি,
পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষে নিহত ও আহত
পরের দিন শুক্রবার খাগড়াছড়ি দিঘীনালার এই ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেন।সেখানেও দুই দলের সংঘর্ষে একজন নিহত অসংখ্য লোক আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায়, স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।এবং এই দুই জেলার সর্বোচ্চ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়ন করে।
অন্যদিকে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে পার্বত্য তিন জেলায় ৭২ ঘন্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ এর ডাক দেয়া হয়।
এরই মাঝে অন্তবর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পরিদর্শন করে গেছেন।
এবং উপদেষ্টারা, এই দুই জেলায় উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সঠিক তদন্ত,ও এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে,উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন।
পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের বৈশিষ্ট্য
এদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে পাহাড়িদের উপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা চট্টগ্রাম বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ,অবরোধ ও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন “জুম্ম ছাত্র জনতা”এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এবং রাজধানীর শাহবাগ মোর অবরোধ করে বিক্ষোভ করে
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল |
যেখানে তারা দাবি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্যাটেলার বাঙালিরা পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি আদিবাসীদের উপর সহিংসতা শুরু করেছে।
এবং সেনাবাহিনী পরোক্ষভাবে তাদের মদদ দিচ্ছে, কেননা সেনাবাহিনীর গুলিতে যে তিনজন মারা গেছে তারা তিনজনই পাহাড়ি।
তাদের দাবি তারা সেনাবাহিনীর বিপক্ষে নয় কিন্তু তারা সেনা শাসনের বিপক্ষে। সেনা শাসন মুক্ত পার্বত্য অঞ্চল চায় তারা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পার্বত্য দুই জেলার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও, জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া।
দেশে চলমান একের পর এক এই সহিংসতার কারণ কি?
সাধারণ মানুষের এই যে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে এটা কি শুধুই জাতিগত,দলগত মতভেদ এর ফলাফল??
নাকি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যকার সম্প্রীতি, সোহার্দ্য বিনষ্ট করে, দেশকে অস্থিতিশীল করার কোন ষড়যন্ত্র?